বাস্তব অভিজ্ঞতা - ২
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অজস্র ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য যান । মূলত ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয় অনেকে আবার মালয়েশিয়া অস্ট্রেলিয়াতেও যায় পড়তে । পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বাড়ছে কিন্তু , এই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে পড়ালেখাটা শেষ করতে পারছে কতজন সে কথাটা আমরা কতজন জানি । বিদেশ এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করছে , নামকরা প্রতিষ্ঠান চাকরি করছে কিন্তু এসবের বাইরে মুদ্রার একটা উল্টো দিক ও আছে । সেটা হয়তো আমাদের চোখে পড়ে না ।
আপনাদের দেশে প্রবাস জীবন মানে
মনে হয় ইউরোপ আমেরিকায় শুধু একবার যেতে পারলেই হলো । বাস্তবতা আসলে পুরোপুরি উল্টো
বাবার টাকা থাকলে ভিন্ন কথা তবে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে যারা এখানে টিউশন ফি দিয়ে পড়তে
আসে তাদের কষ্টটা সীমাহীন । স্কলারশিপ এ পড়তে গেলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর
ডিগ্রির জন্য খরচ হয় 50 থেকে 60 লক্ষ টাকা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার
এক কোটি টাকা পর্যন্ত যায় । এই বিশাল অঙ্কের টাকা পরিবার থেকে নেওয়া সম্ভব নয় অনেকেই
ভাবে ইংল্যান্ড জার্মানি যেতে পারলেই হয় । বিদেশীর
অনেক দেশেই সপ্তাহে 20 ঘণ্টার
বেশি ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয় না । বিদেশী ছাত্রদের তাছাড়া যে কোন দেশে কাজ পেতে
হলে সে দেশের ভাষা যাওয়াটা খুবই জরুরি । কারণ
কাজ করতে হলে আপনাকে ভাষা জানতেই হবে । অনেকে অবশ্য কম পারিশ্রমিকের বিনিময়
অবৈধভাবে সপ্তাহে মাত্রাতিরিক্ত কাজ করে তবে সে ক্ষেত্রে দেখা যায় যেখানে ঘণ্টাপ্রতি
তারা 8 থেকে 10 ডলার পারিশ্রমিক
পাওয়ার কথা সেখানে তাকে দেয়া হচ্ছে মাত্র চার থেকে পাঁচ ডলার । টিউশন ফি নিজের থাকা-খাওয়ার
খরচ সব মিলিয়ে টাকার অংকটা তো ছোট নয় । আর সে কারণেই দেখা যায় দিনে আট ঘন্টা কাজ
করে কাঙ্ক্ষিত টাকা আয় করা যাচ্ছে না আর একটা মানুষ যদি 8 ঘন্টা চাকরি
করে তবে সে ক্লাস করবে কখন আর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে কখন । ক্ষেত্রে দেখা যায়
তারা পড়াশুনা শেষ করতে পারে না । শেষ করলেও
তাদের রেজাল্ট ভালো থাকে না তার চারপাশের এত চাপ টাকার চিন্তা হাড়ভাঙা পরিশ্রম
সবকিছু সামলে এর মধ্যে যারা ভালো
ফলাফল করেন তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার । তবে বেশির
ভাগের করুন কাহিনী , তাই পড়াশোনা
শেষে চাকরির বাজারে শেষ পর্যন্ত হয়তো আর পেরে উঠেনা তারা । দেখা যায় শেষ পর্যন্ত
হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করতে হয় তাদের । কিন্তু তারা কিন্তু দুচোখে হাজারটা স্বপ্ন
নিয়ে দেশ ছেড়ে ছিল সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশা নিয়ে । বিমানে উঠেছিল তাদের পরিবার হয়তো
এতসব সংগ্রামের কথা জানেনা , তারা পথ চেয়ে বসে আছে কবে তাদের সন্তানের পড়ালেখা শেষ হবে কবে সংসারের হাল ধরবে
সন্তানদের নিজেই যে এখনো ঠিকমতো খেতেও পারেন না পড়ালেখা শেষ করতে পেরেছেনা । তারা পথ চেয়ে বসে আছে , কবে তাদের
সন্তানের পড়ালেখা শেষ হবে কবে সংসারের হাল ধরবে । বেচারা সন্তানদের নিজের হালটাও এখনো
ঠিকমতো ধরতে পারলো না সেখানে ? আর যারা
কোন ভাবে পড়ালেখা শেষ করতে পেরেছেন , তাদের নামের
পাশে তবু একটা ডিগ্রি থাকে কিন্তু প্রবাস জীবনের হাজার প্রতিকূলতার কাছে হেরে গিয়ে
যারা মাঝ পথে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিল এই সমস্ত
ড্রপ-আউট দের কেউ মূল্যায়ন করেনা । আর
ড্রপ-আউট যে মার্ক জুকারবার্গ হবে এমন কোন কথা নেই । এরকম পরিস্থিতিতে এতসব
হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু শত শত । আর তাই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর আগে
একটু ভালোভাবে খোঁজ নেওয়া টা ভীষণ দরকার । পরিবারের অর্থনৈতিক সামর্থ্য নিজের সহ্য
ক্ষমতা সবকিছু বিবেচনায় রেখে তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত । একবার ইউরোপ-আমেরিকায়
যাই তারপর দেখা যাবে এরকম ভাবলে প্রবাস জীবন আপনার জন্যনা । সবচেয়ে ভালো হয় যদি বাংলাদেশ
থেকে ব্যাচেলারটা শেষ করা যায় , কারণ অনার্স পাশ হওয়া একটা তরুণের ম্যাচুরিটি
এবং এইচএসসি পাশ করা এক কিশোরের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে ।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.